প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে এভাবেই নিজের অনুভুতির কথা বলছিলেন খুলনার রূপসার পিঠাভোগ গ্রামের ঝুরিভাজা (ময়দা দিয়ে তৈরি) বিক্রেতা ৭৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ আব্দুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনও ভাবিনি পাকা ঘরে বাস করবো। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রধানমন্ত্রী মাধ্যমে আজ একটি পাকা ঘর পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করেন।’
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মাগুরার ১৪৬৯ গৃহহীনকে বাড়ি দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আরেক সুবিধাভোগী ও জাতিসংঘ থেকে রিয়েল হিরো উপাধি পাওয়া রূপসার বাগমারার আখি বলেন, নিজেদের ঘর না থাকায় পিতা-মাতার সাথে এতদিন খালার বাড়িতে থেকেছি। এখন ঘর পেয়ে নিজেদের বাড়িতে উঠবো। সেখানে খোলামেলা পরিবেশে খুব ভালোভাবে কাটবে বলে আশা করছি। ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করতে পারবো।
উপকারভোগী কয়রার নাকশার নার্গিস আক্তার বলেন, আমার স্বামী তালাক দেয়ার পর থেকে এতদিন মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়ি থেকেছি। লোকের বাড়ি কাজ করে ও নদীতে মাছ ধরে সংসার চালানোর পাশাপাশি অনেক চেষ্টা করেও নিজের একটি মাথা গোজার ঠাঁই জোগাড় করতে পারিনি। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘর পাবো জীবনে কখনও ভাবিনি।
আরও পড়ুন: শার্শায় ৫০ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে পাকা ঘর
রূপসার মৈশাঘুনি গ্রামের সুবিধাভোগী মাহমুদা বানু বলেন, বিধবা মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে এখন থেকে এক সাথে থাকতে পারবো ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে। এতদিনতো আমি থাকতাম এক বাড়িতে আর ওই মেয়ে থাকতো আরেক বাড়িতে। এখন আমাদের মা জননী হাসিনা জায়গা দিয়েছে, ঘর দিয়েছে আমি তাতে অনেক খুশি।
রূপসার আঠারোবাকী নদী ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া ৮০ বছরের ইউনুচ বলেন, ‘নদীর পাশে সরকারি জমিতে ঝুপড়িতে বেঁধে ৩০ বছর ধরে থাকছি। ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক কষ্ট করেছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যেন মানুষের কল্যাণে আরও কাজ করতে পারেন।’
আরও পড়ুন: মুজিব বর্ষে ঘর পাচ্ছেন ফরিদপুরের দেড় হাজার গৃহহীন পরিবার
শুধু তারাই নন প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন পার করা খুলনার ৯২২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এখন দুই শতাংশ জমিসহ একটি সেমিপাকা ঘরের মালিক হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন।
এদিকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারের মাঝে শনিবার বাড়ি বিতরণের অনুষ্ঠানটিকে দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষের মাঝে ঘর দিচ্ছি, এটি দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব, বাংলাদেশে এর চেয়ে বড় উৎসব আর কিছু হতে পারে না। আমি সকলের কাছ থেকে দোয়া চাই যাতে আমরা দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’
আরও পড়ুন: বিজয় দিবসে ঘর পেল সুনামগঞ্জের ৩০টি গৃহহীন পরিবার
‘মুজিববর্ষ’ এবং ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষে সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর সরবরাহের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৬৬ হাজার ১৮৯ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উদ্বোধনী কর্মসূচিতে যোগ দেন এবং দেশের ৪৯২ উপজেলার সাথে সংযুক্ত হন।
আরও পড়ুন: কর্মকর্তার অবহেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেল না গৃহহীন পরিবারগুলো!
গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে সরকার। এটি এমন এক পদক্ষেপ যা প্রথমবারের মতো দেখল বিশ্ব।
বাড়িগুলোর প্রতিটি ইউনিটে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।